কমাণ্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী
জন্ম-মৃত্যু : ১৯৩৩-১৯৯১
কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরি , জন্মস্থান- খাগাউড়া, বাহুবল, হবিগঞ্জ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী ১৯৫১, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে তিনি অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি পদক লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি হবিগঞ্জ মহকুমার গভর্নর হন। এছাড়া বাংলাদেশ চা বোর্ড ও হবিগঞ্জ কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের দায়িত্ব পালন করেন। কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার খাগাউড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জম্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আব্দুল বশীর চৌধুরী ও মাতা সৈয়দা ফয়জুন্নেসা খাতুন। দেশের অন্যতম এ সাহসী পুরুষ ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং কারাবরণ করেন। ১৯৬৬’র ৬ দফা আন্দোলনেও ছিলেন সক্রিয়। সে জন্য কারাবরণকরেন দীর্ঘদিন। ১৯৬৯’র স্বৈরাচার আইয়ুব বিরোধী গণঅভূথানে হবিগঞ্জে নেতৃত্ব দেন। এ জন্যও তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। ১৯৭০-র নির্বাচনে আওয়ামীলীগ হতে বাহুবল, চুনারুঘাট ও শ্রীমংগল নিয়ে গঠিত সংসদীয় এলাকা হতে বিপুল ভোটে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। জননেতা মানিক চৌধুরীকে হবিগঞ্জ তথা দেশবাসী যে কারণে মনে রাখবে তা হলো ১৯৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সাহসী ভূমিকা। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ২৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের টেলিগ্রাম পেয়েই গঠন করেন হবিগঞ্জ সংগ্রাম পরিষদ। গ্রহণ করেন বৃহত্তর সিলেটের গণমুক্তি বাহিনীর অধিনায়কত্ব। যুদ্ধ শুরু হলে তিনি হবিগঞ্জের তৎকালীন মহুকুমা প্রশাসক ড. আকবর আলী খানকে (তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা) অস্ত্র ধরেন এবং তাঁর সহযোগিতায় হবিগঞ্জ অস্ত্রাগার লুট করে সেখান থেকে ৭শ ৫০টি রাইফেল নিয়ে তা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। তিনি হবিগঞ্জ মহকুমা কারাগারের তালা জোরপূর্বক খুলে দিয়ে কারাবন্দিদের ছেড়ে দেন। তিনি হবিগঞ্জ ট্রেজারী ও রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে হামলা করে সেখান থেকে সব অর্থ লুট করে তা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাত্যহিক ব্যয় নির্বাহে ব্যয় করেন এবং বাকী টাকা দিয়ে ভারত হতে অস্ত্র ক্রয় করেন। তিনিই প্রথম ভারতের আগরতলায় ভারতীয় সরকারের সাথে অস্ত্র ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেন। সহ সর্বাধিনায়ক কর্ণেল এম. এ. রব, সেক্টর কমান্ডার মেজর সি. আর. দত্ত তাঁকে সিভিলিয়ন সেক্টরে প্রথম কমান্ডেন্ট উপাধীতে ভূষিত করেন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচনে তিনি মাধবপুর হতে আওয়ামীলীগ প্রার্থী হিসাবে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি মাধবপুর উপজেলা জুড়ে বর্তমানে যে স্বল্প গভীর নলকুপ ব্যবহৃত হয় (গাই প্রকল্প) তার প্রচলন ঘটান। যার উপর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুছ গবেষণা করেন। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে এজন্য কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী রাষ্ট্রপতি পদক পান। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি হবিগঞ্জ মহকুমা গভর্ণর হন। তিনি বাংলাদেশ চা বোর্ড ও হবিগঞ্জ কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক এর চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। তিনি কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ও আওয়ামীলীগ হবিগঞ্জ মহকুমা কমিটিরও সভাপতি ছিলেন। শেষ জীবনে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম উপজেলা নির্বাচনে বাহুবল উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় পার্টি হতে নবীগঞ্জ বাহুবল আসনে নির্বাচন করে পরাজিত হন। শেষ জীবনে তিনি ধর্মকর্মের উপর বেশী অনুরক্ত হয়ে পড়েন। তিনি হবিগঞ্জ জিরো পয়েন্ট আব্দুল হাফিজ আফাই মিয়ার অর্থায়নে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ দুর্জয় এর অন্যতম উদ্যোক্তা। এ মহান পুরুষ ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি হবিগঞ্জ শহরের পুরাতন হাসপাতাল রোডস্থ নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন এবং শায়েস্তানগর কবরস্থানে চির শায়িত আছেন।আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মঙ্গল কামনা করি ।