এ্যাডঃ এনামুল হক মোস্তফা শহীদ
জন্ম-মৃত্যু : ১৯৩৮-২০১৬
এ্যাডঃ এনামুল হক মোস্তফা শহীদ (১৯৩৮-২০১৬) জন্মস্থান- চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ।
১৯৭০,১৯৭৩,১৯৯১,১৯৯৬,২০০১ এবং ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে পরপর ছয় বার চুনারুঘাট-মাধবপুর আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে তিনি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব ভার গ্রহন করেন। স্বাধীনতাপূর্ব আইয়ূব বিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণয়ান্দোলন ও ছয় দফা দাবীসহ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সাথে নেতৃত্ব দান করেন।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন
এনামুল হক মোস্তফা শহীদ ২৮ মার্চ ১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ ভারতের আসামের (বর্তমান বাংলাদেশ) সিলেটের হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের উবাহাটা ইউনিয়নের কুটিরগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আব্দুল হক পেশায় চিকিৎসক ছিলেন মাতা খুদেজা খাতুন গৃহিণী ছিলেন।
শিক্ষা জীবন
মোস্তফা শহীদ স্থানীয় কুদ্রতিয়া মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর ১৯৫২ সনে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করেন। হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে ১৯৫৬ সালে বিএ পাস করে ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৬ সালে হাইকোর্টে এনরোলমেন্ট লাভ করেন।
রাজনৈতিক ও কর্মজীবন
এনামুল হক মোস্তফা শহীদ ১৯৬০ থেকে ৬৮ সাল পর্যন্ত হবিগঞ্জ জে কে অ্যান্ড এইচ কে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তিনি ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদান ছিল। হবিগঞ্জ ভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধে হবিগঞ্জ মহকুমা সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের নির্বাহী সদস্য ছিলেন। মোস্তফা শহীদ লেখক ও সাংবাদিক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তার লেখা ‘খোয়াই নদীর বাঁকে’ বইটি বেশ পাঠক প্রিয় ছিল। এ ছাড়াও তিনি মাসিক অভিযাত্রী পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন।
এ্যাডভোকেট এনামুল হক ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট-মাধবপুর আসন থেকে সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক সিলেট-১৭ বর্তমান হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর ১৯৯১ সালের পঞ্চম, জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মোট ৫বার এই আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
তিনি ৬ জানুয়ারি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকারের শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভার সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
পুরস্কার এবং সম্মাননা
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখার জন্য তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেছেন। চুনারুঘাট পৌর মিলনায়তনটি তার নামে ‘বীর মু্ক্তিযোদ্ধা এনামুল হক মোস্তফা শহীদ অডিটরিয়াম’ রাখা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৩ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।
পারিবারিক জীবন এনামুল হক মোস্তফা শহীদ ৪ মার্চ ১৯৭৪ সালে জালালপুর রাইমাট গ্রামের মিনু মমতাজকে বিয়ে করেন। তাদের দুই ছেলে সন্তান।
মৃত্যু ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের উবাহাটা ইউনিয়নের কুটিরগাঁও গ্রামে সমাহিত করা হয়।