হেমাঙ্গ বিশ্বাস : একজন বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার। মূলত লৌকিক ধারার অনুসারী। অনুবাদে ফোকসুরের ব্যবহারে, গণসঙ্গীত রচনায়, সুর সংযোজনার দক্ষতায় হেমাঙ্গ বিশ্বাস বাংলা গণনাট্য সঙ্গীতে এক নতুন প্রবাহের সৃষ্টি করেন। লোকসঙ্গীতকে কেন্দ্র করে গণসঙ্গীত সৃষ্টির ক্ষেত্রে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য।
হেমাঙ্গ বিশ্বাস ১৪ জানুয়ারী ১৯১২ সালে বর্তমান বাংলাদেশের সিলেটের মিরাশিতে জন্মগ্রহণ করেন। হবিগঞ্জ হাইস্কুল থেকে পাশ করার পর তিনি শ্রীহট্ট মুরারিচাঁদ কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ১৯৩২ খ্রীস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন। ১৯৩৫ খ্রীস্টাব্দে কারাবন্দী থাকাকালে তিনি যক্ষারোগে আক্রান্ত হন এবং সেই কারণে তিনি মুক্তি পান। ১৯৪৮ খ্রীস্টাব্দে তেলেঙ্গেনা আন্দোলনের সময়ে তিনি আবারও গ্রেফতার হন এবং তিন বছর বন্দী থাকেন।
১৯৩৮-৩৯ খ্রীস্টাব্দে বিনয় রায়, নিরঞ্জন সেন, দেবব্রত বিশ্বাস প্রমূখের সাথে ভারতীয় গণনাট্য সংঘ বা আই.পি.টি.এ গঠন করেন। পঞ্চাশের দশকে এই সংঘের শেষ অবধি তিনি এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
১৯৪২ খ্রীস্টাব্দে বাংলার প্রগতিশীল লেখক শিল্পীদের আমন্ত্রণে তিনি প্রথম কলকাতায় আসেন সঙ্গীত পরিবেশন করতে। ১৯৪৩ খ্রীস্টাব্দে তাঁর উদ্যোগে এবং জ্যোতিপ্রকাশ আগরওয়ালের সহযোগিতায় সিলেটে গণনাট্য সংঘ তৈরি হয়। স্বাধীনতার আগে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সুরকারদের মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রধান। সেই সময়ে তাঁর গান তোমার কাস্তেটারে দিও শান, কিষাণ ভাই তোর সোনার ধানে বর্গী নামে প্রভৃতি আসাম ও বাংলায় সাড়া ফেলেছিল।
চীন-ভারত মৈত্রীর ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল। দু’বার তিনি চীনে গিয়েছিলেন। মাস সিঙ্গার নামে নিজের দল গঠন করে জীবনের শেষ দিকেও তিনি গ্রামে গ্রামে গান গেয়েছেন। তিনি কল্লোল, তীর,লাললন্ঠন, প্রভৃতি নাটকে সঙ্গীত পরিচালনা করেন।
তাঁর ঐতিহাসিক মাউন্টব্যাটন মঙ্গলকাব্য গানটির রচনা কাল ১৯৪৮। পঞ্চাশের দশকে তাঁর গানে দেশবিভাগের যন্ত্রণার পাশাপাশি সংগ্রামের কঠিন শপথে উদ্দীপ্ত হওয়া যায়। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনে তিনি লিখলেন, শোন দেশের ভাই ভগিনী শোন আচানক কাহিনী, কাঁদো বাংলা জননী। আর শহরে এই গানটি ঢাকার ডাক শিরোনামে গীতিকার চিত্রিত করেছেন।
১৯৬৫ খ্রীস্টাব্দে অনুবাদ করেন আমরা করবো জয় মার্কিন লোকসঙ্গীত শিল্পী পিট সিগারের গাওয়া সেই জনপ্রিয় গানটি। ১৯৬৪-তে পারমাণবিক যুদ্ধের প্রতিবাদে রচনা করেন শঙ্খচিল গানটি।
হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান এবং শঙ্খচিলের গান তাঁর গানের সঙ্কলন। বাংলা ও অসমিয়া ভাষায় তাঁর লিখিত গ্রন্থ লোকসঙ্গীত শিক্ষা।
২২ নভেম্বর ১৯৮৭ সালে তিনি পরলোক গমন করেন।
গতবছর থেকে শুরু করে এ-বছর শতবর্ষ বা সার্ধশতবর্ষের যে মহোৎসব আমরা ক্রমাগত লক্ষ করে আসছি, তাতে কার প্রতি কার কতটা শ্রদ্ধা বা সেই সমস্ত নিবেদন কতটা আন্তরিক, তা নিয়ে সন্দেহ বিস্তর৷ আর, কে কাকে শ্রদ্ধা জানাবে, সেই তালিকাটিও যে ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক স্বার্থ-প্রণোদিত, সেসব অনুভব করার ‘সৌভাগ্য’-ও আমাদের হয়েছে৷ যে সমস্ত মনীষীরা শতবর্ষ কিংবা সার্ধশতবর্ষের ফলকটি স্পর্শ করলেন, এই জাতীয় প্রতিবেদন রচনায় তাঁদের অবদানের কোনও উৎকর্ষ যেমন সাধিত হয় না, তেমনি, কোন রাজনীতি কাকে ব্রাত্য করে রাখল, তাতেও তাঁদের উচ্চতা বিন্দুমাত্র কমে না৷ কিন্তু তাঁদের স্মরণ করলে আমাদের আত্মিক ও বৌদ্ধিক কিছু লাভালাভের সম্ভাবনা থাকে যেহেতু, সে কারণেই আমরা ওই মনীষীদের কথা মনে করতে চাই৷ একে নিজেদের স্বার্থ বললেও খুব একটা আপত্তি করার কিছু নেই৷ তবে যাই হোক না কেন, এ-সমস্তই প্রযুত্তু হতে পারে যদি আমাদের আন্তরিক সদিচ্ছা থাকে, সেই প্রশ্নে- ব্যবসা বা কাগজে একটা কপি লেখার উদ্দেশ্যে নয়৷ সেটা যাদের মনোবাসনা, তারাই চিন্তা করে কে কার দিকে তাকাবে আর কে অচ্যুত। যেমন একটি উদাহরণ দিই- বাংলার দুই প্রবাদপ্রতিম সংগীত-ব্যক্তিত্ব গণসঙ্গীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস ও বিশিষ্ট লোককবি নিবারণ পণ্ডিত—এ বছর এঁদের দু-জনেরই শতবর্ষ৷ হেমাঙ্গ বিশ্বাসের তো আবার মৃত্যুরও রজতজয়ন্তী৷ নিবারণ পণ্ডিতের মৃত্যুর পঁচিশবছর পূর্তি হয়ে গেছে দু-বছর আগেই৷ কিন্তু কোন কোন সংবাদমাধ্যম হেমাঙ্গ বিশ্বাসের শতবর্ষের কথা উল্লেখ করলেও নিবারণ পণ্ডিতের কথা আজ পর্যন্ত কেউ উল্লেখ করেনি। সে যাই হোক না কেন, এই ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক পত্র-পত্রিকার কথা না হয় বাদই দিলাম, নিবারণ পণ্ডিতের কথা গণশক্তি বা তথাকথিত বাম মতাদর্শে বিশ্বাসী পত্রিকাসমূহ একবার উচচারণ করল না কেন? ষাট কিংবা কিছুকাল আগের লাল বাংলার ততোধিক লাল প্রগতিশীল সংগঠন সমূহ? সন্দেহ জাগে, বাংলায় গণসংগীতের স্রষ্টা বলে যিনি অন্যতম, তাঁকে মনে আছে তো এদের? আসলে এই সন্দেহটা অমূলক নয়৷ কেন না, একসময়ের যে-অবস্হান ছিল বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির, সেখান থেকে তারা হাজার যোজন সরে এসেছে বহুকাল আগেই৷ ফলত এখন যারা বামপন্হী বলে নিজেদের মনে করে থাকে, তারা পার্টির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কোনও ইতিহাসই জানে না৷ অবশ্য জানার কোনও প্রয়োজনও নেই৷ কেন না, গত ২০-২২ বছর ধরে পার্টির কর্মপদ্ধতি যে-আবহে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে, তাতে ওইসমস্ত ইতিহাস জানার একটুও সুযোগ ছিল না৷ বলা ভাল, সে সুযোগ দেওয়া হয় নি৷ দিলে পার্টির অবস্হান আজ এরকম হত না৷ আজকের সাংস্কৃতিক ক্যাডাররা আর নিবারণ পণ্ডিতের নামও জানে না৷ যদিও এর পুরোটা দায়ই বামপন্হীদের৷
গণসঙ্গীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস বা লোককবি নিবারণ পণ্ডিতের অবদানের় কথা বাদ দিন, তাঁদের নামের সঙ্গেও উপরি -উত্তু কারণেই এখনকার প্রায় কোনও বামপন্হী সাংস্কৃতিক কর্মীর পরিচয় নেই৷ তাও বিষয়টা আজ এমনই দাঁড়িয়েছে যে, বামপন্হীদের মধ্যে যদি এখন কোনও সাংস্কৃতিক কর্মী খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে সেটাই যেন একটা বিরাট ব্যাপার৷ কিন্তু এই প্রসঙ্গেই হেমাঙ্গ বিশ্বাস ‘গণনাট্য সংঘ বনাম গণনাট্য আন্দোলন’ শীর্ষক একটি নিবন্ধে লিখেছিলেন, “১৯৪৩ -এ প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই এ বিষয়ে দুটি লাইনের সংঘাত প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে চলে আসছে৷ একটা প্রশ্ন বারে বারে আমাদের সামনে দেখা দিয়েছে–গণনাট্য সংঘ ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখা না কমিউনিস্ট শিল্পীদের নেতৃত্বে একটি গণপ্রতিষ্ঠান?…আজ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী কার্যতঃ সি পি বি-র একটি সাংস্কৃতিক শাখাতে পরিণত হয়েছে, গণপ্রতিষ্ঠানের রূপ তার নেই৷ তার মানে কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক শাখা–ব্যাপারটি যে গ্রহণযোগ্য নয়, তা হেমাঙ্গবাবু তখনই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন৷
ষাট দশকের মাঝামাঝি সময়ে উৎপল দত্তের ‘কল্লোল’ নাটকের গানে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের সুরারোপ বাংলার সামগ্রিক ইতিহাসে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, তা যদি এখনকার বামপন্হীরা জানতেন, তাহলে তাঁদের আজ এই দুর্দশা হয় না৷ একজন মনীষীকে জন্মদিন বা শতবর্ষে স্মরণ করা মানে যে শুধু তাঁর মূর্তিতে মালা দেওয়া নয়, তাঁর গোটা কর্মজীবন ও অবদান সম্পর্কে অবহিত হওয়া ও সত্যিকারের শিক্ষা নেওয়া–এই আসল কথাটা বামপন্হীরা কেন ভুলে যাবেন, প্রশ্ন তো এখানেই৷ তবু হেমাঙ্গবাবু বা তাঁর নাম এখনও কিছুটা স্মরণের মধ্যে আছে, কিন্তু নিবারণ পণ্ডিতের নাম এখনকার ক-জন বামপন্হী জানেন? সত্যি কথাটা বুকে হাত দিয়ে বলুন তো দেখি? জানলে এ-বছর যে তাঁর শতবর্ষ–এই তথ্যটা ছাপার অক্ষরে তো দূরের কথা, কোনও আলোচনায়ও শোনা গেল না কেন?
লোককবি নিবারণ পণ্ডিতকে লেখা হেমাঙ্গ বিশ্বাসের চিঠি-প্রসঙ্গে আসার আগে স্বয়ং লোককবির আত্মকথন শোনা যাক৷ গণনাট্য পত্রিকার ১৯৮১ সালের জানুয়ারি-মার্চ সংখ্যায় ‘কবির আত্মকথন’ শীর্ষক নিবন্ধে নিবারণ পণ্ডিত লিখেছেন, “১৯১২ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারী আমার জন্ম৷ জেলা ময়মনসিংহ, মহকুমা কিশোরগঞ্জ, গ্রাম সগড়া৷ আমাদের পরিবার কৃষিনির্ভর ছিল৷ তবে আমার বাবা ভগবানচন্দ্র পণ্ডিত তাঁর ‘পণ্ডিত’ উপাধি পেয়েছিলেন শিক্ষকতা করার জন্য৷ আমার বয়স যখন বছর দশেক তখন বাবা মারা যান৷ দিন যাচিছল কোনোমতে, কিন্তু পরপর কয়েকবছর অজন্মার ফলে আমাদের মা-বেটার সংসারও অচলপ্রায় হল৷ বিড়ি বেঁধে কিছু আয়ের চেষ্টা করেছি ঐ সময়টাতে৷ পরে দেশত্যাগী হয়েও ঐ বিড়ি সম্বল করেছিলাম৷ কিশোরগঞ্জের রামানন্দ সুকলে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা আমার৷ কিশোর বয়সেই রথতলার জনসভায় মাঝে মাঝে যেতাম বন্ধুদের সাথে৷ ছোট বয়সেই আমি গ্রাম্য গান কবিতা রচনা করতে পারতাম বলে গায়ক ও বাদকরা আমাকে দলে নিয়ে যেতেন৷” আর পরবর্তিকালে নিবারণ পণ্ডিতকে লেখা একটি চিঠিতে হেমাঙ্গ বিশ্বাস জানাচেছন, “আপনি আমাদের মধ্যে সত্যিকারের জনগণগীতিকার৷ শ্রমজীবী জনতা থেকে কোনওদিন বিচিছন্ন হন নি৷ একই হাতে বিড়ি বানিয়ে ও গান বানিয়ে সংগ্রাম করেছেন৷ সুদীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশী কাল যাবৎ জনজাগরণে আপনার যে অমূল্য অবদান–তাতে আপনাকে নিরাময় করার জন্য জনগণের কাছে অর্থসাহায্য চাইবার দাবী আপনার সবচেয়ে বেশি…আপনি মরে গেলেও কোন সরকারি বা আধা সরকারি দান গ্রহণ করতে পারেন না জানি, তাহলে তো দু’শ টাকার সরকারি ‘স্বাধীনতা যোদ্ধার’ পেনসন ভোগ করতে পারতেন৷” আর একটি স্মৃতিচারণায় নিবারণবাবু সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, “নিবারণ পণ্ডিত গণনাট্যে এসে গান লেখেন নি, তিনি কৃষক আন্দোলনে থেকে গান লিখেছেন৷ পরে তাঁকে গণনাট্যে নিয়ে আসা হয়৷” আসলে ১৯১৪ সালে ঢাকায় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার প্রেক্ষিতে নিবারণ পণ্ডিত রচিত একটি গানই তাঁকে পরিচিতি দেয়৷ সেই বিখ্যাত গানটি হল–“…শুনতে পাই ঢাকা সরে, মানুষে মানুষ মারেয়ঘর পোড়ায় দিন দুপুরে, করে নানা অত্যাচারয়যে যাহারে যেথায় পায়, ছুরিকাঘাত করে গায়য়পিছন থেকে মারে মাথায়, নাই তার কোন প্রতিকার৷” কমিউনিস্ট পার্টির কৃষক আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আগেই তিনি গান বাঁধতেন, গাইতেন৷ পরবর্তিকালে ১৯৪৫ সালে ময়নসিংহ জেলার নেত্রকোনায় সারাভারত কৃষকসভার নবম সম্মেলন উপলক্ষে তিনি গ্রামে গ্রামে গান গেয়ে প্রচার চালান৷ আর, ওই সময়েই গারো পাহাড় এলাকার হাজং উপজাতিভুত্তু চাষিদের টংক প্রথা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল৷ ওই আন্দোলনের স্বপক্ষে তিনি গান রচনা করেন ও কৃষকদের সংগঠন করে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালান৷ বাংলাদেশে থাকাকালীন ব্রিটিশ রাজত্বের অবসানের পরও কমিউনিস্টদের প্রতি চরম অত্যাচার করত আনসার বাহিনী, তার শিকার হয়েছিলেন নিবারণবাবুও৷ ১৯৫০ সালে তিনি ভারতে চলে আসেন৷ প্রচুর গান তিনি রচনা করেছেন৷ সংগীত সম্পর্কিত অনেক গ্রন্হও তাঁর আছে৷ কিন্তু সমস্তই গানেই তাঁর চরিত্র প্রধানত প্রতিবাদীর৷ বাংলা গণসংগীতই হোক আর প্রতিবাদী গানই হোক–বাংলা সংগীতে নিবারণ পণ্ডিতের অবদান অবিস্মরণীয়৷
হেমাঙ্গ বিশ্বাস এবং নিবারণ পণ্ডিত–এই দুই কিংবদন্তীই এবার শতবর্ষে পদার্পণ করলেন৷ একইসঙ্গে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের মৃত্যুর রজতজয়ন্তী উদযাপনের মুহূর্তও সমাগত৷ বাংলা গান তথা সংস্কৃতির জগতটিকে এই দুই মহান শিল্পী যে-মর্দায় উন্নীত করে গিয়েছিলেন, তাকে যথাযোগ্য সম্মান জানানোর একটি প্রাসঙ্গিকতা আমাদের কাছে উপস্থিত। ভ্রান্ত রাজনৈতিক চেতনায় সংস্কৃতি চর্চার যে-অভ্যাসকে গত দু-আড়াই দশক ধরে এই রাজ্যে প্রায় বলপূর্বক ব্রাত্য করে রাখা হয়েছিল, তার ফলে বাঙালির প্রভূত ক্ষতি হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই৷ সরকার বদল হলে রাজ্যের সামগ্রিক পরিকল্পনার একটা বদল ঘটে অবশ্যই৷ তা মানুষের চিন্তা-চেতনার উপরেও প্রভাব ফেলে৷ সেটা সম্প্রতি এই রাজ্যে হয়েছে৷ ফলত, রাজনীতির সংকীর্ণতা কিংবা তুচছ দলতন্ত্র ভুলে হেমাঙ্গ বিশ্বাস বা নিবারণ পণ্ডিতের মতো মনীষীর শিক্ষাকে যদি আমরা নিঃসংশয়ে আত্মস্হ করতে পারি, তাহলে সেটা আমাদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম–উভয়ের কাছেই মঙ্গলের৷
ঋণস্বীকারঃ দি সানডে ইন্ডিয়ান।। অরুপ দাস, নগরনাট, সিলেট।